শুক্রবার, ২২ জানুয়ারি, ২০২১

ফুসফুসের এনাটমি এবং ফিজিওলজি : শ্বাসতন্ত্রের মানচিত্র ও আবহাওয়া

 ফুসফুস এনাটমি এবং ফিজিওলজি বিষয়টি সাধারণতঃ ডাক্তারদের পাঠ্য বস্তু। কিন্তু সাধারণ মানুষও যদ্দুর সম্ভভ বিষযটি জেনে রাখতে পারেন। করোনা মহামারি বিশ্বকে নাড়িয়ে দিল। শ্বাসতন্ত্রের রোগ কি ভয়াবহ ব্যাপার সেটি টের পেতে কারুরই বাকী নেই। বিশ্বজুড়ে শারীরিক অসুস্থতা এবং অকাল প্রয়াণের একটি অন্যতম কারণ শ্বাসযন্ত্রটির বিভিন্ন রোগ-ব্যাধি।এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য যক্ষা, ইনফ্লুয়েঞ্জা এবং করোনা জাতীয় মহামারি, নিউমোনিয়া।  এই রোগগুলোর আলাপই বারবার ঘুরে ফিরে আসে এলার্জি, এ্যাজমা, সিওপিডি রোগের প্রাদুর্ভাবও প্রতিনিয়ত বাড়ছে। ধারণা করা হয়, ২০২৫ সাল নাগাদ বিশ্বে মোট ধূমপায়ীর সংখ্যা দেড় বিলিয়ান বৃদ্ধি পাবে। ফলাফলে, বিশ্বে ধূমপান জনিত শ্বাসতন্ত্রের রোগও বেড়ে যাবে উল্লেখযোগ্য পরিমাণে।


শ্বাসতন্ত্রের
 রোগগুলোর প্যাথোলজি বিবিধ প্রকার। সংক্রমণ, প্রদাহ, নিওপ্লাজম ( ক্যান্সার কোষের সৃষ্টি) এবং কিছু ক্ষেত্রে দেহক্ষয় জনিত বিভিন্ন প্রক্রিয়া। যেকারণে এই রোগগুলোকে বুঝতে হলে, চিকিৎসাবিজ্ঞানের একাধিক মূলগত-আলোচনা আয়ত্ত্বে থাকা দরকার। বর্তমান দিনে চিকিৎসাপদ্ধতি অনেকদূর অগ্রসর হয়েছে। অবস্ট্রাকটিভ লাং ডিজিজ, সিস্টিক ফাইব্রেসিস, অবস্ট্রাকটিভ স্লিপ এপনিয়া ( বোবায় ধরা) এবং পালমোনারী হাইপারটেনশান -কে নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব বর্তমান দিনে। তবে ফুসফুস  শ্বাসতন্ত্রের অন্যান্য অংশের ক্যান্সার এবং ফাইব্রোসিং লাং ডিজিজগুলোর সামনে মানুষ এখনও অসহায়। 

  ফুসফুস  শ্বাসযন্ত্রের রোগ ব্যাধিকে বোঝার জন্য দেহের এই অংশটির গঠন বিন্যাস এবং পরিবেশ সমন্ধে ধারণা রাখাটা জরুরী। নিম্নোক্ত আলোচনায় সেরকম একটি প্রচেষ্টা নেয়া হল। 

 ফুসফুসের এনাটমি  ফিজিওলজি :

  • বোনী-থোরাক্স বা বক্ষপিঞ্জরের দুই তৃতীয়াংশ দখল করে রাখে মানুষের ফুসফুস
  • ফুসফুসের মধ্যরেখা বরাবর বা মিডিয়ালি অবস্থান নেয় স্পাইন (শিরদাড়া), হৃদপিন্ড এবং মিডিয়াস্টিনাম। 
  • ফুসফুসের নীচে থাকে ডায়ফ্রাম
  • বক্ষপিঞ্জরের ভেতরটা একধরণের ঝিল্লী দিয়ে আবৃত।একে বলে প্যারাইটাল প্লুরা’ ফুসফুসও একটি সূক্ষ্ন ঝিল্লী দিয়ে মোড়ানো। যাকে বলে, “ ভিসেরাল প্লুরা এই দুটি ঝিল্লী পরস্পরের বেশ ঘনিষ্ঠ অবস্থানে থাকে। শ্বাসপ্রশ্বাসের সময় বক্ষপিঞ্জর এবং ফুসফুস তাদের অবস্থান পরিবর্তন করে। অর্থাৎ, নড়াচড়া করে বলতে পারেন। এই নড়াচড়াটি সুসমন্বিত। প্যারইটাল প্লুরা এবং ভিসেরাল প্লুরার মাঝে “ স্লাইডিং কন্টাক্টবা ঝিল্লীদ্বয় অনায়াসে পরস্পরের ওপর দিয়ে পিছলে যেতে পারার কারণেই সেটি সম্ভব হয়
  • ফুসফুসের নীচে থাকে ডায়াফ্রাম ডায়াফ্রাম এমনিতে গম্ভুজ আকৃতির। শ্বাস গ্রহণের সময় ডায়াফ্রাম নীচের দিকে প্রসারিত হয়। অর্থাৎ গম্বুজ আকৃতি হ্রাস পায়। এই ডায়াফ্রামকে স্নায়বিক যোগান দেয় ফ্রেনিক নার্ভস সার্ভিকাল থ্রী,ফোর এবং ফাইভ থেকে এদের উৎপত্তি। 

ফুসফুসের বিভিন্ন সেগমেন্ট : ডেভিডসন্স মেডিসিন


  • শ্বাসগ্রহণের সময় ডায়াফ্রাম ছাড়াও অন্য গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকাটি রাখে পাঁজরের হাড়। এক্সটার্নাল ইন্টারসকস্টাল মাসেল বা পাঁজরের হাড়গুলোর মধ্যবর্তী পেশীগুলোর সংকোচন-প্রসারণের ফলে পাজরের হাড়গুলো ওপর দিকে এবং বাইরের দিকে উঠে আসে। ( কস্টোভার্টেব্রাল জয়েন্ট বা পাজর এবং মেরুদন্ডের সংযোগস্থলের সাপেক্ষে) থোরাসিক স্পাইনাল কর্ড থেকে আসা ‌ইন্টারকস্টাল নার্ভ , ইন্টারকস্টাল মাসেলগুলোকে স্নায়বিক যোগান দেয়
  • শ্বাসত্যাগ বা ‌এক্সপিরেশান মূলতঃ একটি পরোক্ষ প্রক্রিয়া। ফুসফুসের “ইলাস্টিক রিকয়েলপ্রকৃতি এক্ষেত্রে ভূমিকা রাখে
  • নাক থেকে এলভিওলাই (ফুসফুসের বায়ু আদান-প্রদানের ক্ষুদ্রতম অঞ্চল - বায়ুথলি) অবধি বায়ুবহনকারী একটি পথ বিদ্যমান (কন্ডাকটিং এয়ারওয়ে) এই পথটিই সুবিস্তৃত, পাতলা এবং সংবেদনশীল এলভিওলার সার্ফেসের সাথে বাহিরের পরিবেশের যোগসূত্র রচনা করে।
  • আপার এয়ারওয়ে’ (শ্বাসতন্ত্রের ওপরিভাগ) দিয়ে শ্বাস গ্রহণ করার পর, নাসিকা গহ্বরে সেটি পরিস্রুত হয়, শারীরিক তাপমাত্রায় উন্নীত হয়, এবং পূর্ণ হয় জলীয় বাষ্পে। শ্বাসত্যাগের সময় এই তাপমাত্রা এবং জলীয়তা আংশিক ফিরে যায় 
  • বায়ু-আদানপ্রদানের ক্রস-সেকশানাল-এরিয়াটির পরিমাণ (ব্যবচ্ছেদ করলে যে দ্বিমাত্রিক অঞ্চল পাওয়া যায়) সবচেয়ে ছোট গ্লটিস এবং ট্রাকিয়ায় (শ্বাসরন্ধ্র  শ্বাসনালী) ফলে শ্বাসবাহী ব্যবস্থার এই কেন্দ্রীয় অংশে সহজেই প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হতে পারে, বিভিন্ন ফরেন-বডি বা টিউমারের মাধ্যমে। 
  • ল্যারিংস, ট্রাকিয়া, মেইন ব্রঙ্কাই ( স্বরযন্ত্র, শ্বাসনালী, প্রধান শ্বাসনালীকা) মধ্য দিয়ে বাতাসের জোরালো  কিছুটা অনিয়মিত প্রবাহের ফলে সাধারণ ব্রীদ-সাউন্ড (স্টেথোস্কোপে দিয়ে যা শোনা হয়)-এর সৃষ্টি হয়।
  • ফুসফুসের সামগ্রিক কলাতন্ত্রে বায়ুবাহী নালীকাগুলো অসংখ্য ভাবে বিভক্ত হয়েছে। বিভক্তির তৃতীয় পর্যায়ে এসে এদের মোট পরিমাণ তিনশত বর্গ সেমিরও বেশী। ফলাফলে বায়ু প্রবাহের গতি এখানে অত্যন্ত ধীর। বায়ুর প্রবাহ এখানে কার্যতঃ শব্দহীন। মূলতঃ শ্বাসনালীকাগুলোর বিভক্তির একদম অন্তিম পর্যায়টিতে, গ্যাসীয় আদানপ্রদানটি সংঘটিত হয় ডিফিউশান বা ব্যপন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে
  • গ্যাসীয় আদানপ্রদানের একক “দি এসাইনাস শাখান্বিত রেসপিরেটোরী ব্রঙ্কিওল (শ্বাসনালীকা) এবং এলভিওলাই গুচ্ছ নিয়ে গঠিত হয় এই একক।এখানে ফুসফুসের রক্তনালীকায় প্রবাহিত রক্ত এবং শ্বাসলব্ধ বাতাস পরস্পরের ঘনিষ্ঠ সংস্পর্শে আসে। বাতাস  রক্তের মাঝে দূরত্ব . মাইক্রোমিটারেরও কম থাকে এখানে। এখানেই অক্সিজেন গ্রহণ  কার্ব-ডাই-অক্সাইডের নিঃসরণ ঘটে।
  • একপ্রকার চ্যাপ্টা এপিথেলিয়াল কোষ যার নাম টাইপ ওয়ান নিউমোসাইট দিয়ে এলভিওলাই-এর প্রাচীর গঠিত। আরও কিছু চতুষ্কোণ কোষ থাকে, টাইপ টু নিউমোসাইট 
  • টাইপ টু নিউমোসাইট ‘সারফেকটেন্টতৈরী করে। সারফেকটেন্ট , বিবিধ ফসফোলিপিডের একটি মিশ্রণ। এটি ফুসফুসের “সারফেস টেনশানকমিয়ে দেয়। সাধারণতঃ “ সারফেস টেনশানে”- কারণে ফুসফুসের এলভিওলাই বন্ধ হয়ে যায়। সারফেকটেন্ট সেটি হতে দেয় না। ফুসফুসের কোন প্রকার আঘাতজনিত ক্ষয় ঘটলে, টাইপ টু নিউমোসাইট বিভাজিত হয়ে টাইপ ওয়ান নিউমোসাইট তৈরী করতে পারে সেই ক্ষতিপূরণ করার জন্য। 

 

ফুসফুসের যন্ত্রকৌশল

  • সুস্থ এলভিওলাইয়ের প্রাচীরে, ইলাস্টিন এবং কোলাজেন ফাইবারের ( ইলাস্টিন -কোলাজেন দুটোই প্রোটিন ) একটি সূক্ষ্ন জালিকা থাকে। একটি স্বাভাবিক শ্বাস গ্রহণ  ত্যাগের পরে ( টাইডাল ব্রেদ) ফুসফুসে অবশিষ্ট বাতাসের পরিমাণকে বলে ফাংশানাল রেজিডুয়াল ক্যাপাসিটি বা এফ-আর-সি
  • এই পরিমাণ বাতাস থাকাবস্থায়, ফুসফুস তার ইলাস্টিক রিকয়েল গুণের কারণে ভেতরে দিক ঢুকে যেতে চায়। ইলাস্টিন ফাইবার এবং এলভিওলার লাইনিং ফ্লুইডের ( বায়ুথলির সংলগ্ন তরল) সার্ফেস টেনশানের কারণে এমনটি ঘটে থাকে।কিন্তু ওদিকে বক্ষপিঞ্জরে তার স্বাভাবিক অবস্থান থেকে ভেতরের দিকে ঢুকে যেতে চায় না। এই বিপরীতমুখীতাই একটি সাম্যাবস্থা বজায় রাখে। দুটি ঝিল্লীর মাঝখানে একটি নেগেটিভ প্রেশারের সৃষ্টি হয়
  • ফুসফুসের স্বাভাবিক ধারণক্ষমতা (ফিজিওলজিকাল লাং ভলিউম) পর্যন্ত তাকে সহজেই প্রসারিত হতে দেয় ইলাস্টিন ফাইবারগুলো। কিন্তু ফুসফুসের পূর্ণাঙ্গ প্রসারণের সময়, কোলাজেন ফাইবার একটি বিপরীত মুখী টানে এই প্রসারণকে দমন করতে চায়। ফলে, সুস্থ অবস্থাতেও, ফুসফুসের সর্বোচ্চ শ্বাসগ্রহণের ক্ষমতা খোদ ফুসফুসের মাধ্যমেই সীমিত হয় (বক্ষপিঞ্জরের মাধ্যমে নয়)

  • ফুসফুসের ভেতরে বিভিন্ন টিস্যু বা কলাতন্ত্রের ওজন , বিভিন্ন নির্ভরশীল অংশগুলোকে চেপে সংকুচিত করে রাখে। এবং সবচেয়ে ওপরের অংশগুলোকে ফুলিয়ে দেয়। ফলে, শ্বাসলব্ধ বাতাসের একটি বড় অংশ ফুসফুসের একদম নিম্নবর্তী অঞ্চলে (ব্যাযাল রিজান) চলে যায়। আবার, মধ্যাকর্ষণ শক্তির কারণে রক্তও সবচেয়ে বেশী প্রবাহিত হয় ঐ অঞ্চলে। 
  • এলভিওলার গাত্রের ইলাস্টিন ফাইবার, বায়ুবাহী নালীকার ওপর রেডিয়াল ট্রাকশান ( টেনে ধরে রাখা) এর মাধ্যমে ক্ষুদ্র বায়ুবাহী নালীকার কার্যক্ষমতা ঠিক রাখে। সুস্থ অবস্থাতেও, শ্বাস ত্যাগের সময় এই ক্ষুদ্র এয়ারওয়ে বা বায়ুপথগুলো সংকুচিত হয়। কারণ, উচ্চ-চাপ-সম্পন্ন এলভিওলাই ঘিরে রেখেছে এদের। কিন্তু রেডিয়াল ইলাস্টিক ট্রাকশান বায়ুপথগুলোকে বন্ধ হতে দেয় না। 
  • সুতরাং, যে পরিমাণ বাতাস শ্বাসত্যাগ করা সম্ভব , সেটি পুরোপুরি এক্সপিরেটরী মাসেল বা শ্বাসত্যাগের সাথে সম্পর্কিত পেশীগুলোর ওপর নির্ভর করে। এই পেশীগুলো বক্ষপিঞ্জরকে যতটা ভেতরের দিকে সংকুচিত হতে দেবে, ততটুক বাতাসই ত্যাগ করা সম্ভব।
  • এমফাইসিমার ক্ষেত্রে, এলভিওলাসের প্রাচীর ক্ষয় হয় ফলে , ক্ষুদ্র বায়ুপথগুলোকে রক্ষা করার কেউ থাকে না। ফলে শ্বাসত্যাগের সময় এই বায়ুপথ বা এয়ারওয়েগুলো বন্ধ হয়ে যায়। বাতাস এই বায়ুপথগুলোতে আটকা পড়ে যায়। একারণে রোগী পূর্ণাঙ্গ শ্বাসত্যাগ করতে পারে না।

 

শ্বাস প্রশ্বাস কিভাবে নিয়ন্ত্রিত হয় ?

  • শ্বাস প্রশ্বাসের সমস্ত চক্রটি বা রেসপিরোটোরী সাইকেলের সূচনা হয় মস্তিষ্কের পোস্টেরিয়ার মেডুলা অবলঙ্গাটায় অবস্থিত রেসপিরোটোরী মোটর নিউরনের মাধ্যমে। স্বাস্থ্য বা রোগগ্রস্থ উভয় অবস্থাতেই , বাহির থেকে পাওয়া একাধিক উদ্দীপনা এই মোটর নিউরনগুলোকে নিয়ন্ত্রণ করে :
  • সেরেব্রোস্পানা ফ্লুইডের  পিএইচের পরিবর্তনে সাড়া দেয় ভেন্ট্রোল্যাটেরাল মেডুলায় অবস্থিত   সেন্ট্রাল   কেমোরিসেপ্টার। রক্তে কার্বণ ডাই অক্সাইডেরর পরিমাণ বেড়ে গেলে এরা পরোক্ষভাবে উদ্দীপনা প্রাপ্ত হয়। 
  • দি ক্যারোটিড বডিয ( ক্যারোটিড আর্টারীর বিভাজন মুখে অবস্থিত এক গুচ্ছ কেমোরিসেপ্টার সেল) হাইপোক্সেমিয়া বা রক্তে অক্সিজেনের মাত্রা কমে গেলে টের পায়। তবে মূলতঃ ধমনীর রক্তে অক্সিজেন মাত্রা  কিলোপ্যাসকেল বা ৬০ মিমি-পারদচাপের কম হলে এরা সক্রিয় হয়। ধমনীর রক্তে কার্বন-ডাই-অক্সাইড বেড়ে গেলে হাইপোক্সিয়া বা কলাতন্ত্রে অক্সিজেনের অভাব ঘটে। এটির প্রতিও সংবেদনশীল ক্যারোটিড বডিয।
  • শ্বাসযন্ত্রের পেশীগুলোর স্পিন্ডেল যান্ত্রিক চাপের পরিবর্তন বিষয়ে সংবেদনশীল। 
  • ফুসফুসের “ ভেগাল সেন্সরী ফাইবার”-গুলো প্রসারণের সাপেক্ষে উদ্দীপ্ত হয়। তাছাড়া বিষাক্ত পদার্থ শ্বাসের মাধ্যমে প্রবেশ করলে, বা ফুসফুসে কোন রোগব্যাধির সৃষ্টি হলে এই নার্ভ ফাইবারগুলো প্রতিক্রিয়া প্রদান করে
  • ব্যাক্তির (কর্টিকাল) ইচ্ছা এবং (লিম্বিক) আবেগ-অনুভূতি, শ্বাস প্রশ্বাসের এই স্বয়ংক্রিয়তাকে অগ্রাহ্য করতে পারে।

 

ফুসফুসের বাতাস ও রক্ত পরিবহনের মাঝে সম্পর্ক

  •  ফুসফুসে গ্যাসীয় আদানপ্রদানের ঘটনাটি সবচেয়ে বেশী গুরুত্ববহ। একে ঠিক রাখার জন্য ফুসফুসের যে কোন একক অঞ্চলে বাতাস ও রক্ত সংবহনের মাঝে সুসমন্বয় প্রয়োজন (ভেন্টিলেশান-পারফিউশান গুড ম্যাচ)
  •  ফুসফুসের সেগমেন্ট এবং সাবসেগমেন্ট পর্যায়ে ( প্রধান শ্বাসনালীকার শাখার ভিত্তিতে ফুসফুসকে সেগমেন্ট ও সাবসেগমেন্টে ভাগ করা হয়) , অক্সিজেনের ঘাটতি হলে পালমোনারী আর্টারিওল ( হার্ট থেকে কাবর্ন ডাই অক্সাইড সমৃদ্ধ রক্ত যে রক্তনালীর মাধ্যমে ফুসফুসে আসে) সংকুচিত হয়। ওদিকে এয়ারওয়ে বা ফুসফুসীয় বায়ুপথে বিদ্যমান কার্ব-ডাই-অক্সাইড শ্বাসনালীকা বা ব্রঙ্কাইকে প্রসারিত করে। ফলে  একক অঞ্চলে বাতাস ও রক্তের মাঝে সুসমন্বয় থাকে।
  •  ফুসফুসের রোগ ব্যাধির কারণে কিছু অঞ্চলে বাতাসের যোগান কমে যায়, আবার অনেক স্থানে রক্তের সঞ্চালন হ্রাস পায়। এর ফলে শ্বাসযন্ত্র বিকল হয়ে যেতে পারে।
  •   কৌশিক নালীকা ধ্বংস করে, বা এ্যালভিওলার-ক্যাপিলারী মেমব্রেনের পুরুত্ব বৃদ্ধি করে ( যেমন এমফাইসিমা বা ফাইব্রোসিস) - এমন রোগগুলো ভেনটিলেশান-পারফিইউশান মিসম্যাচ বা ফুসফুসে সঞ্চালনশীল রক্ত ও বাতাস মাঝে সমন্বয়টিকে নষ্ট করা ছাড়াও , গ্যাসের ডিফিউশান বা গ্যাসের ব্যপনকে সরাসরি ব্যাহত করতে পারে।
  •   সুস্থ মানুষের দেহে পালমোনারী সার্কুলেশানে বা ফুসফুস সম্পর্কিত রক্তনালী গাত্রে রক্তচাপ থাকে কম । প্রায় ২৪ / ৯ মিমি- মার্কারি। রক্তের প্রবাহে বড় ধরণের বৃদ্ধি ঘটলেও এই চাপ একইরকম থাকতে পারে। যেমন এক্সারসাইজের সময়।
  •  পালমোনারী হাইপারটেনশান বা শ্বাসতন্ত্রের রক্তচাপ বৃ্দ্ধি পায় যেসব কারণে - এমফাইসিমায় রক্তনালী ধ্বংস হলে , থ্রম্বাসের মাধ্যমে রক্তনালীতে প্রতিবন্ধকতার সৃষ্টি হলে, ফুসফুসের আভ্যন্তরীণ প্রদাহের সাথে রক্তনালীর সম্পর্ক থাকলে, অথবা পালমোনারী ভাস্কুলার ডিজিজের কারণে নালীকাগাত্র মোটা হয়ে গেলে
  •   এসব ক্ষেত্রে ক্ষতিকর প্রভাবটি দেখা যায় হার্টের ডানদিকের অংশে। রাইট ভেন্ট্রিকালে বা হার্টের যে প্রকোষ্ঠটি ফুসফুসে রক্ত পাঠায় , সেটি আকারের অস্বাভাবিক বেড়ে যায়। ইসিজিতে রাইট এক্সিস ডেভিয়েশান দেখা যায়। পি -ওয়েভ গুলো বড় হয়। যাকে বলে পি-পালমোনালে। সাথে রাইট-হার্ট-ফেইলিউরের অন্যান্য বৈশিষ্ট্য তো থাকেই রোগীর। এসমস্ত বিষয়গুলোকে বর্ণণা করার জন্য় অধিকাংশ সময়ই কর পালমোনালেশব্দটি ব্যবহার করা হয়।

 

ফুসফুসের প্রতিরক্ষণ ব্যবস্থা :

আপার এয়ারওয়ে বা ফুসফুসের ওপরিভাগের বায়ুপথগুলি রক্ষিত হয় যেভাবে -

  •   বাতাসের সাথে ঢুকে পড়া বড় ধূলিকণা নাকের ভেতরের লোমকূপে আটকা পড়ে যায়
  •   ছোট কণিকাগুলো নাকের ভেতরে মিউকোসাতে আটকে থাকে। টার্বিনেট এবং সেপ্টামকে আবৃত করে রাখা কলামনার সিলিয়েটেড এপিথেলিয়াম, এই ধূলিকণাকে ওরোফ্যারিংসের দিকে নিয়ে যায়।
  •   কাশির সময়, বন্ধ গ্লটিস বা শ্বাসরন্ধ্রে চাপ দেয় এক্সপিরেটোরী মাসেল ( শ্বাস-প্রশ্বাসে সাহায্যকারী পেশী)। ইন্ট্রাথোরাসিক প্রেশার অত্যন্ত বৃদ্ধি পায়। তারপরই আচমকাই সমস্ত চাপটা একসাথে ছেড়ে দেয়া হয়। এসমসয়  ফ্লেক্সিবাল-পোস্টেরিয়ার-ট্রাকিয়াল ওয়াল বা শ্বাসনালীর পেছনের অংশটি আশেপাশের চাপের কারণে ভেতর দিকে ঢুকে আসে। ট্রাকিয়ার ক্রস-সেকশানাল-এরিয়া কমে যায়। ফলে সর্বোচ্চ বৃদ্ধি পায় বাতাসের বেগ, এবং ব্যক্তি ঠিকমত কাশতে পারেন।
  •   বাগযন্ত্র বা ল্যারিঙস একটি স্ফিংটার হিসেবে কাজ করে। খাদ্য গ্রহণ, বা বমির সময় , ল্যারিঙস বন্ধ হয়ে যাওয়ার মাধ্যমে ফুসফুসের বায়ুপথে কোন কিছু ঢুকতে দেয় না।

 

শ্বাসতন্ত্রে নিম্নভাগের প্রতিরোধ ব্যবস্থা :

  • দেহের জন্মগত ও বিকশিত দুধরণের রোগ প্রতিরোধ ব্যাবস্থাই , একসাথে কাজ করার মাধ্যমে, শ্বসতন্ত্রের নিম্নভাগকে জীবাণু মুক্ত রাখে এবং এই অংশের গঠন ও কার্যক্ষমতা বজায় রাখে।
  • ফুসফুসের ইনেট বা সাধারণ রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থার উপাদানগুলো কোন সুনির্দিষ্ট বস্তুকে প্রতিরোধ করে না। শ্বাস প্রশ্বাসের সাথে অনেক ধরণের বস্তু কণা বায়ুপথগুলোতে প্রবেশ করে। মিউকাসের সেগুলি আটকে যায়। মিউকোসিলিয়ারি এস্কেলেটারসেগুলিকে পরিষ্কার করে। 

মিউকোসিলিয়ারি এস্কেলেটার


  • সিগারেটের ধোঁয়া মিউকাস নিঃসরণ বাড়ায়। কিন্তু মিউকোসিলিয়ারি ক্লিয়ারেন্সকে কমিয়ে দেয়। ফলে লোয়ার-রেসপাইরেটোরী-ট্র্যাক্টের সংক্রমণের ঝুঁকি বেড়ে যায়। এর মাঝে নিউমোনিয়াও রয়েছে।
  •  বেশ কিছু বিরল রোগ রয়েছে। সেগুলোতে মিউকোসিলিয়ারি ট্রান্সপোর্টের ত্রুটি একটি প্রধান বৈশিষ্ট্য। যেমন কার্টেগেনার সিনড্রোম। ইয়াংস সিনড্রোম। সিলিয়ারি ডিসমোটিলিটি সিনড্রোম। এ রোগগুলোর বৈশিষ্ট্য : বারবার সাইনো-পালমোনারী ইনফেকশান , এবং ব্রঙ্কায়েকটেসিস ( ফুসফুসের বায়ুপথগুলো স্থায়ীভাবে অতিরিক্ত প্রসারিত হয়ে যায়, মিউকাসে তৈরী হয় অত্যাধিক, )
  •  এয়ারওয়ে অনেক ধরণের পদার্থ নিঃসরণ করে। তার মাঝে জীবাণু ধ্বংসকারী বিভিন্ন পেপটাইড থাকে। যেমন ডিফেন্সিন, ইমিউনোগ্লোবিউলিন এ, লাইসোযাইম, এন্টিপ্রোটিনেয, এন্টিঅক্সিডেন্ট। কিছু পেপটাইড ব্যাকটেরিয়াকে চিহ্নিত করে। তারপর হত্যা করে। অন্যগুলো শক্তিশালী প্রোটিন বিধ্বংসী এনজাইম নিয়ন্ত্রণ করে। প্রদাহ সৃষ্টিকারী বিভিন্ন কোষ থেকে নিঃসৃত হয় এসব এনজাইম।
  •  এর মাঝে আলফা-ওয়ান এন্টিট্রিপসিন উল্লেখযোগ্য। আলফা-ওয়ান , নিউট্রোফিল এলাস্টেযকে নিয়ন্ত্রণ করে। আলফা-ওয়ান এন্টিট্রিপসিনের অভাবে তাই হতে পারে প্রিম্যাচিওর এমফাইসিমা 
  •  ম্যাক্রোফেয বিভিন্ন জীবাণু, জৈব ধূলিকণা ইত্যাদি ক্ষুদ্র কণাকে সাবাড় করে দেয়। অজৈব কণাকে ম্যাক্রোফেয নিতে পারে না। যেমন এসবেস্টোস, সিলিকা। এসবের সংস্পর্শে ম্যাক্রোফেয মরে যায়। এই প্রতিক্রিয়ায় বিভিন্ন শক্তিশালী প্রোটিন বিধ্বংসী বা প্রোটিওলাইটিক এনজাইম নিঃসরণ হয়। এসব এনজাইম ফুসফুসকে ধ্বংস করে।
  •   এয়ারওয়েতে নিউট্রোফিল তেমন থাকে না।  তবে পালমোনারী সার্কুলেশানে একটি নূন্যতম পরিমাণে তারা বিরাজ করে সবসময়। ফুসফুসে ব্যাকটেরিয়ার আক্রমণ হলেই এই নিউট্রোফিল ছুটে যায়। হয়তো এসব কারণেই, সেপসিস সিনড্রোম এবং ট্রমায় ফুসফুসে ক্ষয় বা লাং-ইনজুরি পরিলক্ষিত হয়।
  • এডাপ্টিভ ইমিউনিটি বা বিকশিত রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থার বৈশিষ্ট্য - সুনির্দিষ্ট প্রতিক্রিয়া। এখানে আক্রমনকারী জীবাণু বিষয়ে স্মৃতি বা মেমোরি তৈরী হয়। টি এবং বি লিমফোসাইটের কাছে এন্টিজেন উপস্থাপনের ভূমিকা রাখে লাং -ডেনড্রাইটিক-সেলস (কোষ)

 

ফুসফুস জরুরী অঙ্গ মানব শরীরের। উপরোক্ত আলোচনা থেকে বোঝা যায় অত্যন্ত সূক্ষ এবং সংবেদনশীল একটি প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে পুরো শ্বাসযন্ত্রটি কাজ করছে। এই প্রক্রিয়ায় ছন্দপতন যেন না ঘটে সেদিকে লক্ষ্য রাখা সুস্থ জীবনের জন্য অপরিহার্য।

---------------------------- ---------------------------- ---------------------------- ---------------------------- -------------------- 

রেফারেন্স : ডেভিডসন্স মেডিসিন, গাইটন ফিজিওলজি, গ্রেয এনাটমি 

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

নিউরোলজির বিভিন্ন পরীক্ষা নীরিক্ষা

  লোকালাইজিং   লেশান্স   ইন দি সেন্ট্রাল নার্ভাস সিস্টেম - ( সেন্ট্রাল নার্ভাস সিস্টেমে ক্ষত বা লেশানের অবস্থান নির্ণয় )   রোগীর হিস্ট্রি নি...